কম্পিউটার কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
আজকের বিশ্বে কম্পিউটার আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা, ব্যবসা, বিনোদন, চিকিৎসা, গবেষণা - প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, কম্পিউটার আসলে কী?
কত প্রকারের কম্পিউটার আছে? এবং সেগুলো কিভাবে কাজ করে? এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
.
কম্পিউটার কাকে বলে?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা ডেটা প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি নির্দেশাবলীর একটি সেট অনুসরণ করে কাজ করে এবং ডেটা ইনপুট, প্রক্রিয়াকরণ এবং আউটপুট করতে পারে।
কম্পিউটারের মূল উপাদান:
কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট (CPU): CPU কে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা হয়। এটি ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং নির্দেশাবলী বাস্তবায়নের জন্য দায়ী।
মেমরি: মেমরি ডেটা এবং নির্দেশাবলী সংরক্ষণ করে।
ইনপুট ডিভাইস: ইনপুট ডিভাইস ব্যবহারকারী থেকে ডেটা এবং নির্দেশাবলী গ্রহণ করে। কীবোর্ড, মাউস, স্ক্যানার ইত্যাদি ইনপুট ডিভাইসের উদাহরণ।
আউটপুট ডিভাইস: আউটপুট ডিভাইস প্রক্রিয়াকৃত ডেটা ব্যবহারকারীর কাছে প্রদর্শন করে। মনিটর, প্রিন্টার, স্পিকার ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইসের উদাহরণ।
স্টোরেজ ডিভাইস: স্টোরেজ ডিভাইস ডেটা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সংরক্ষণ করে। হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ, সলিড স্টেট ড্রাইভ, ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ইত্যাদি স্টোরেজ ডিভাইসের উদাহরণ।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ:
কম্পিউটারকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।
আকার অনুযায়ী: ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ কম্পিউটার, ট্যাবলেট কম্পিউটার, স্মার্টফোন ইত্যাদি।
উদ্দেশ্য অনুযায়ী: ব্যক্তিগত কম্পিউটার, সার্ভার, ওয়ার্কস্টেশন, এমবেডেড সিস্টেম ইত্যাদি।
প্রযুক্তি অনুযায়ী: অ্যানালগ কম্পিউটার, ডিজিটাল কম্পিউটার, হাইব্রিড কম্পিউটার ইত্যাদি।
কম্পিউটারের কাজ:
ডেটা প্রক্রিয়াকরণ: কম্পিউটার গণিতের নিয়ম ব্যবহার করে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে।
ডেটা সংরক্ষণ: কম্পিউটার স্টোরেজ ডিভাইসের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের ডেটা যেমন ডকুমেন্ট, ছবি, ভিডিও, সঙ্গীত ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সংরক্ষণ করতে পারে।
যোগাযোগ স্থাপন: কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এর ফলে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান, ইমেল আদান-প্রদান, ভিডিও কনফারেন্স ইত্যাদি করতে পারি।
নিয়ন্ত্রণ: কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন, ট্রাফিক লাইট ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, শিল্প কারখানায় রোবট নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
শিক্ষা: কম্পিউটার এখন শিক্ষাক্ষেত্রে অপরিহার্য একটি উপকরণ। এটি ই-লার্নিং, অনলাইন কোর্স, গবেষণা ইত্যাদি কাজে সহায়তা করে।
কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রকার:
উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কম্পিউটারকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হলো:
1. আকার অনুযায়ী:
ডেস্কটপ কম্পিউটার: এটি একটি সাধারণ আকারের কম্পিউটার যা (desk) রাখা হয়। এটি সাধারণত ব্যক্তিগত ব্যবহার, অফিসের কাজ, এবং গেমিং এর জন্য জনপ্রিয়।
কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রকার: নাম ও বিবরণ
কম্পিউটারকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। আকার, উদ্দেশ্য, প্রযুক্তি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রকার নিম্নরূপ:
আকার অনুযায়ী:
ডেস্কটপ কম্পিউটার: এটি একটি সাধারণ আকারের কম্পিউটার যা ডেস্কে রাখা হয়। এটি ব্যক্তিগত ব্যবহার, অফিসের কাজ এবং গেমিং এর জন্য জনপ্রিয়।
Desktop Computer
ল্যাপটপ কম্পিউটার: এটি একটি পোর্টেবল কম্পিউটার যা সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া যায়। ল্যাপটপে সাধারণত ডেস্কটপের চেয়ে কম শক্তিশালী কম্পোনেন্ট থাকে, তবে এটি আরামদায়ক এবং বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সুবিধা দেয়।
Laptop Computer
ট্যাবলেট কম্পিউটার: এটি একটি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে সহ একটি মোবাইল ডিভাইস। ট্যাবলেট সাধারণত ল্যাপটপের চেয়েও পাতলা এবং হালকা হয় এবং বিনোদন ও ওয়েব ব্রাউজিং এর মতো মৌলিক কাজের জন্য উপযোগী।
Tablet Computer
স্মার্টফোন: স্মার্টফোন হলো একটি ছোট মোবাইল ফোন যা কম্পিউটারের মতো কাজ করতে পারে। এতে একটি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে, অপারেটিং সিস্টেম এবং বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন চালানোর ক্ষমতা থাকে। স্মার্টফোন কল করার পাশাপাশি ইমেল, ওয়েব ব্রাউজিং, ছবি তোলা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার, গেম খেলা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা যায়।
Smartphone
উদ্দেশ্য অনুযায়ী:
ব্যক্তিগত কম্পিউটার (PC): এটি সাধারণত বাড়িতে বা অফিসে ব্যবহৃত হয়। ওয়ার্ড প্রসেসিং, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইমেল, গেমিং, বিনোদন ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
সার্ভার: এটি একটি শক্তিশালী কম্পিউটার যা নেটওয়ার্কের অন্যান্য কম্পিউটারের জন্য ডেটা এবং পরিষেবা সরবরাহ করে।
Server Computer
ওয়ার্কস্টেশন: এটি একটি উচ্চ-পারফরম্যান্স কম্পিউটার যা গ্রাফিক্স ডিজাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার মতো কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
Workstation Computer
মেইনফ্রেম: এটি একটি বৃহৎ এবং শক্তিশালী কম্পিউটার যা ব্যাংক, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বড় বড় কর্পোরেশনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।
Mainframe Computer
এমবেডেড সিস্টেম: এটি একটি ছোট কম্পিউটার যা নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রকার: নাম ও বিবরণ (শেষ)
প্রযুক্তি অনুযায়ী:
অ্যানালগ কম্পিউটার: এ ধরনের কম্পিউটার অবকাঠিন রাশি (যেমন- ভোল্টেজ, তাপমাত্রা) এর মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে বের করে কাজ করে। এগুলো সাধারণত বিশেষায়িত কাজের জন্য, যেমন- পদার্থবিজ্ঞানের সমীকরণ সমাধান বা এনালাগ সিগনাল প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ডিজিটাল কম্পিুটার: বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কম্পিউটার হলো ডিজিটাল কম্পিউটার। এগুলো 0 এবং 1 এর মতো অবিচ্ছিন্ন সংকেত প্রক্রিয়াকরণ করে। আধুনিক কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় এগুলো বিভিন্ন জটিল কাজে, যেমন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লearning (learning), এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।
হাইব্রিড কম্পিউটার: এ ধরনের কম্পিউটার অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় প্রযুক্তিই একত্রে ব্যবহার করে। এগুলো সাধারণত olyan (oil refinery) (oil refinery) (oil refinery) বা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো এমন জায়গায় ব্যবহৃত হয় যেখানে অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ধরনের ডেটা প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয়।
উপসংহার:
কম্পিউটার আমাদের জীবনের একেবারে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন আকার, উদ্দেশ্য এবং প্রযুক্তি নির্ভর করে কম্পিউটারের বিভিন্ন রূপ রয়েছে। প্রতিটি ধরনের কম্পিউটারেরই নিজস্ব সক্ষমতা এবং ব্যবহার রয়েছে। আশা করি, এই প্রবন্ধটি আপনাকে কম্পিউটারের বিভিন্ন ধারণা সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে।
টেকফ্রেম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয় ।
comment url