কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি
কম্পিউটার বাংলা টাইপিং শেখার নিয়মকম্পিউটার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা, ব্যবসা, বিনোদন, যোগাযোগ - প্রায় সব ক্ষেত্রেই কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে? এর ভেতরে কী কী অংশ আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আমাদেরকে কম্পিউটারকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।
.
কম্পিউটারের মূল অংশ
কম্পিউটারের মূলত ৮টি অংশ রয়েছেঃ
1. ইনপুট ডিভাইসঃ
ইনপুট ডিভাইস হল সেইসব যন্ত্র যা ব্যবহারকারীকে কম্পিউটারের সাথে তথ্য প্রদান করতে দেয়। কিছু সাধারণ ইনপুট ডিভাইস হল:
কীবোর্ডঃ টাইপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
মাউসঃ পয়েন্টার নিয়ন্ত্রণ এবং ক্লিক করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
স্ক্যানারঃ কাগজপত্র বা ছবি কম্পিউটারে স্ক্যান করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
টাচস্ক্রিনঃ স্পর্শ করে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
মাইক্রোফোনঃ কণ্ঠস্বর রেকর্ড করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইনপুট ডিভাইস হল কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম। আমরা এই যন্ত্রগুলো ব্যবহার করে কম্পিউটারকে নির্দেশাবলী প্রদান করি, তথ্য ইনপুট করি এবং বিভিন্ন কাজ করতে বলি। ইনপুট ডিভাইস ছাড়া কম্পিউটার ব্যবহার করা অসম্ভব।
কিছু সাধারণ ইনপুট ডিভাইসঃ
কীবোর্ডঃ টাইপিং, ডেটা এন্ট্রি, এবং কমান্ড প্রদানের জন্য সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ইনপুট ডিভাইস। বিভিন্ন আকারের কীবোর্ড পাওয়া যায়, যার মধ্যে কিছুতে অতিরিক্ত বোতাম থাকে যা নির্দিষ্ট কাজগুলিকে দ্রুততর করে তোলে।
মাউসঃ পয়েন্টার নিয়ন্ত্রণ এবং ক্লিক, ড্র্যাগ, এবং ডাবল ক্লিকের মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশন এবং ফাইল নির্বাচন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরণের মাউস আছে, যেমন ওয়্যার্ড, ওয়্যারলেস, অপটিক্যাল, এবং লেজার মাউস।
স্ক্যানারঃ কাগজপত্র, ছবি, এবং অন্যান্য দলিল কম্পিউটারে স্ক্যান করার জন্য ব্যবহৃত হয়। স্ক্যানার বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায় এবং এগুলো ব্যক্তিগত ও অফিস ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
টাচস্ক্রিনঃ স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, এবং কিছু ল্যাপটপে ব্যবহৃত একটি ইনপুট ডিভাইস। স্পর্শ, সোয়াইপ, এবং পিঞ্চ করার মাধ্যমে স্ক্রিন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
মাইক্রোফোনঃ কণ্ঠস্বর রেকর্ড করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ভয়েস কমান্ড, ভয়েস টাইপিং, এবং অনলাইন মিটিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয়।
ওয়েবক্যামঃ ভিডিও কল, লাইভ স্ট্রিমিং, এবং ছবি তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। ওয়েবক্যাম ল্যাপটপে অন্তর্নির্মিত থাকতে পারে অথবা আলাদাভাবে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
জয়স্টিকঃ গেম খেলার জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত ইনপুট ডিভাইস। এতে দিক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি লিভার এবং বোতাম থাকে।
লাইট পেনঃ স্পর্শকাতর স্ক্রিনে অঙ্কন, লেখা, এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও আরও অনেক ধরণের ইনপুট ডিভাইস রয়েছে যা নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
আরো পড়ুনঃকম্পিউটার বাংলা টাইপিং শেখার নিয়ম
2. প্রসেসিং ইউনিট (CPU):
CPU কে কম্পিউটারের "মস্তিষ্ক" বলা হয়। এটি ইনপুট ডিভাইস থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রক্রিয়া করে এবং আউটপুট ডিভাইসে পাঠায়। CPU-এর গতি কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা নির্ধারণ করে।
প্রসেসিং ইউনিট (CPU): কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক
কম্পিউটারের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রসেসিং ইউনিট (CPU) কে কম্পিউটারের "মস্তিষ্ক" বলা হয়। এটি কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ইনপুট ডিভাইস থেকে প্রাপ্ত নির্দেশাবলী এবং তথ্য গুলো প্রক্রিয়া করে এবং আউটপুট ডিভাইসে পাঠায়। CPU ছাড়া কম্পিউটার কোন কাজই করতে পারে না।
CPU-এর প্রধান কাজঃ
নির্দেশাবলী প্রক্রিয়াকরণঃ CPU প্রোগ্রামগুলো থেকে নির্দেশাবলী পড়ে এবং সেগুলো বুঝে।
গাণিতিক এবং যৌক্তিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন: CPU যোগ, গুণ, ভাগ, তুলনা, এবং অন্যান্য গাণিতিক ও যৌক্তিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে।
ডেটা নিয়ন্ত্রণঃ CPU মেমরিতে সংরক্ষিত ডেটা নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রয়োজনে তা অ্যাক্সেস করে।
অন্যান্য উপাদানের সাথে যোগাযোগ: CPU মাদারবোর্ড, মেমরি, স্টোরেজ ডিভাইস, এবং অন্যান্য উপাদানের সাথে যোগাযোগ করে।
CPU-এর গতিঃ
CPU-এর গতি মেগাহার্টজ (MHz) বা গিগাহার্টজ (GHz) এ পরিমাপ করা হয়। CPU-এর গতি যত বেশি হবে, তত দ্রুত এটি নির্দেশাবলী প্রক্রিয়া করতে এবং কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।
CPU-এর ধরণঃ
বাজারে বিভিন্ন ধরণের CPU পাওয়া যায়, যার মধ্যে দুটি জনপ্রিয় হলঃ
ইন্টেল (Intel): ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপ কম্পিউটারের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় CPU প্রস্তুতকারক।
AMD: ইন্টেলের প্রধান প্রতিযোগী, AMD উচ্চ-পারফরম্যান্স CPU তৈরির জন্য পরিচিত।
CPU নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিতঃ
আপনার প্রয়োজনঃ আপনি CPU কে কিসের জন্য ব্যবহার করবেন? গেমিং, ভিডিও এডিটিং, বা সাধারণ কাজের জন্য?
আপনার বাজেটঃ CPU-এর দাম বিভিন্ন হতে পারে।
ক্লক স্পিড: CPU-এর ক্লক স্পিড যত বেশি হবে, তত দ্রুত এটি কাজ করবে।
কোর সংখ্যাঃ CPU-তে কতগুলি কোর আছে তাও গুরুত্বপূর্ণ। বেশি কোর থাকলে CPU একই সাথে বেশি কাজ করতে পারে।
থ্রেডিংঃ কিছু CPU মাল্টি-থ্রেডিং সমর্থন করে, যার মানে হল একটি কোর একই সাথে একাধিক থ্রেড পরিচালনা করতে পারে।
আরো পড়ুনঃকম্পিউটার বাংলা টাইপিং শেখার নিয়ম
3. মেমরিঃ
মেমরি হল সেই অংশ যেখানে কম্পিউটার ডেটা এবং তথ্য সংরক্ষণ করে। দুটি প্রধান ধরণের মেমরি রয়েছে।
RAM (Random Access Memory): এটি একটি অস্থায়ী মেমরি যা কম্পিউটার চালু থাকাকালীন ডেটা সংরক্ষণ করে। কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলে RAM-এর ডেটা হারিয়ে যায়।
ROM (Read Only Memory): এটি একটি স্থায়ী মেমরি যা কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার ধারণ করে। ROM-এর ডেটা পরিবর্তন করা যায় না।
4. আউটপুট ডিভাইসঃ
আউটপুট ডিভাইস হল সেইসব যন্ত্র যা কম্পিউটার থেকে তথ্য প্রদর্শন করে। কিছু সাধারণ আউটপুট ডিভাইস হল:
মনিটরঃ ভিজ্যুয়াল তথ্য প্রদর্শন করে।
প্রিন্টারঃ কাগজে তথ্য মুদ্রণ করে।
স্পিকারঃ শব্দ প্রদান করে।
প্রজেক্টরঃ একটি বড় পর্দায় ভিজ্যুয়াল তথ্য প্রদর্শন করে।
5. স্টোরেজ ডিভাইসঃ
স্টোরেজ ডিভাইস হল সেইসব যন্ত্র যা দীর্ঘমেয়াদী তথ্য সংরক্ষণ করে। এগুলো সাধারণত RAM এর চেয়ে ধীর কিন্তু বেশি পরিমাণে তথ্য ধরে রাখতে পারে। কিছু সাধারণ স্টোরেজ ডিভাইস হল:
হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (HDD): এটি একটি চৌম্বকীয় ডিস্ক যা ঘুরতে থাকে এবং তথ্য লিখে ও পড়ে।
সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD): এটি একটি ফ্ল্যাশ মেমরি ডিভাইস যা HDD এর চেয়ে দ্রুত কিন্তু সাধারণত কম স্টোরেজ স্পেস থাকে।
অপ্টিক্যাল ড্রাইভ: এটি CD, DVD, বা Blu-ray ডিস্ক পড়তে এবং লিখতে পারে।
6. মাদারবোর্ডঃ
মাদারবোর্ড হল কম্পিউটারের মূল সার্কিট বোর্ড। এটি CPU, মেমরি, স্টোরেজ ডিভাইস, এবং অন্যান্য উপাদানগুলিকে একে অপরের সাথে সংযোগ করে।
মাদারবোর্ড, যা কম্পিউটারের মূল সার্কিট বোর্ড নামেও পরিচিত, কম্পিউটারের বিভিন্ন উপাদানকে একে অপরের সাথে সংযোগ করে এবং তাদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি করে। এটি কম্পিউটারের একটি অপরিহার্য অংশ যা ছাড়া কম্পিউটার কাজ করতে পারে না।
মাদারবোর্ডের প্রধান কাজ:
উপাদান সংযোগ: CPU, মেমরি, স্টোরেজ ডিভাইস, গ্রাফিক্স কার্ড, এবং অন্যান্য উপাদানগুলোকে একে অপরের সাথে সংযোগ করে।
ডেটা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ: উপাদানগুলোর মধ্যে ডেটা এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
BIOS (Basic Input/Output System) ধারণ করে: BIOS কম্পিউটার চালু করার সময় হার্ডওয়্যার পরীক্ষা করে এবং অপারেটিং সিস্টেম লোড করে।
চিপসেট ধারণ করে: চিপসেট হল একটি বিশেষ চিপ যা মাদারবোর্ডের বিভিন্ন কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
মাদারবোর্ডের ধরণঃ
বাজারে বিভিন্ন ধরণের মাদারবোর্ড পাওয়া যায়, যার মধ্যে কিছু জনপ্রিয় হল:
ATX (Advanced Technology Extended): ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় মাদারবোর্ড ফর্ম ফ্যাক্টর।
Micro ATX (μATX): ATX এর চেয়ে ছোট আকারের মাদারবোর্ড, যা ছোট ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য উপযুক্ত।
Mini-ITX: ATX এবং μATX এর চেয়েও ছোট আকারের মাদারবোর্ড, যা SFF (Small Form Factor) কম্পিউটারের জন্য উপযুক্ত।
মাদারবোর্ড নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিতঃ
আপনার প্রয়োজনঃ আপনি মাদারবোর্ড কে কিসের জন্য ব্যবহার করবেন? গেমিং, ভিডিও এডিটিং, বা সাধারণ কাজের জন্য?
আপনার বাজেটঃ মাদারবোর্ডের দাম বিভিন্ন হতে পারে।
ফর্ম ফ্যাক্টর: আপনার কেসের সাথে মাপসই একটি মাদারবোর্ড নির্বাচন করুন।
সকেটঃ CPU-এর জন্য সকেটের ধরন নিশ্চিত করুন।
চিপসেটঃ আপনার প্রয়োজনীয় কার্যকারিতা সমর্থন করে এমন একটি চিপসেট সহ মাদারবোর্ড নির্বাচন করুন।
স্লট এবং পোর্টঃ আপনার প্রয়োজনীয় স্লট এবং পোর্টগুলি নিশ্চিত করুন।
আরো পড়ুনঃকম্পিউটার বাংলা টাইপিং শেখার নিয়ম
7. পাওয়ার সাপ্লাইঃ
পাওয়ার সাপ্লাই হল সেই অংশ যা দেয়ালের বিদ্যুৎকে কম্পিউটারের various components চালানোর জন্য উপयुक्त ভোল্টেজে রূপান্তর করে।
8. গ্রাফিক্স কার্ড (GPU):
গ্রাফিক্স কার্ড হল একটি বিশেষ প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট যা ভিডিও এবং গ্রাফিক্স সম্পর্কিত কাজগুলো দ্রুততর সম্পন্ন করে। গেমিং, ভিডিও এডিটিং, এবং ডিজাইনের মতো কাজের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহারঃ
কম্পিউটার বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত একটি জটিল যন্ত্র। এই উপাদানগুলো একত্রে কাজ করে আমাদেরকে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে সাহায্য করে। আশা করি, আপনাকে কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে ধারণা দেবে।
টেকফ্রেম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয় ।
comment url